বাংলাদেশের শিক্ষা সংস্কৃতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

রমনা পার্কে পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কে মূল ধরে তার পার্শ্ববর্তী এলাকা হচ্ছে ঢাকা শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা একাডেমিচারুকলা ইনস্টিটিউটকেন্দ্রীয় গণ গ্রন্থাগার ও জাতীয় জাদুঘর এলাকা সংস্কৃতি-কর্মীদের চর্চা ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মূল ক্ষেত্র। এর বাইরে বেইলি রোডকে নাটকপাড়া বলা হয় সেখানকার নাট্যমঞ্চগুলোর জন্য। এছাড়াও নবনির্মিত শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল এবং অন্যান্য মঞ্চসমূহ নাট্য ও সঙ্গীত উৎসবে সব সময়ই সাংস্কৃতিক চর্চাকে অব্যাহত ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় বছরের বিভিন্ন সময়ে নাট্যোৎসব ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটা জুড়ে বাংলা একাডেমিতে একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে পহেলা বৈশাখে রমনা পার্কে ছায়ানটের অনুষ্ঠানসহ সারাদিন গোটা অঞ্চলে সাংস্কৃতিক উৎসব চলে। সাংস্কৃতিক হৃদ্যতার ধারাবাহিকতায় আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও সারা বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে।

শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর কেন্দ্রস্থলের অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্য

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের সময় হতেই ঢাকা এই প্রাদেশিক রাজধানীর শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই সময়ই ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৯৮০'র দশক পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এর আশেপাশের এলাকাকে এডুকেশন ডিস্ট্রিক্ট বলা হতো। এই এডুকেশন ডিস্ট্রিক্টের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ,মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজগবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল,সরকারি বিজ্ঞান কলেজভিকারুননেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজউইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজঢাকা কলেজ,ঢাকা সিটি কলেজ,হলিক্রস কলেজনটর ডেম কলেজতেজগাঁও কলেজ (পূর্বে নাইট কলেজ), ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুলইডেন মহিলা কলেজইষ্ট এন্ড হাই স্কুলঅগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়আজিমপুর গার্লস স্কুলবেগম বদরুন্নেসা কলেজঢাকা মেডিকেল কলেজঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা আর্ট কলেজ (চারুকলা ইন্সটিটিউট) প্রভৃতি।

ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর একটি।

ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সৃষ্টি হয়েছিলো ব্রিটিশ শাসনামলে। তখন একে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। বুদ্ধদেব বসুর মতো ছাত্র এবং বিজ্ঞানী সত্যেন বোসের মতো শিক্ষক তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামকে উচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলটি সভ্যতার স্বাক্ষর বহন করে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে আয়োজিত হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। অন্যদিকে পুরান ঢাকায় ১৮৫৮ সাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে চলে আসছে।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রধানত তিনটি মূল ধারা রয়েছে; এগুলোর প্রথমটি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত পাঠক্রম (যা বাংলা অথবা ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করা যায়), দ্বিতীয়টি হচ্ছে বেসরকারি কেজি লেভেল হতে এ লেভেল পর্যন্ত ইংরেজি মিডিয়ামের ব্রিটিশ পাঠক্রম এবং তুতীয়টি হচ্ছে মূলত আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষানির্ভর মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা। মাদ্রাসাভিত্তিক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটি সরকার নির্ধারিত পাঠক্রম এবং কোনো কোনোটি নিজস্ব পাঠক্রম ব্যবহার করে শিক্ষা প্রদান করে। শেষোক্ত এশ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সরকারের কোনো প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই। এই একই চিত্র ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে প্রায় একশভাগ প্রযোজ্য।

বলা বাহুল্য নয় যে, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ঢাকায় অবস্থিত। আশির দশক পর্যন্ত ঢাকাসহ বাংলাদেশে পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শিক্ষাক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি ছিলো। এর পর হতেই বেসরকারি খাতে কিন্ডারগার্টেন ও স্কুলের প্রসার হতে শুরু করে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তার সংশোধন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে এক বাঁধভাঙ্গা জোয়ার নিয়ে আসে। এযাবত প্রায় ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। লক্ষণীয় বিষয় হলো এর মধ্যে প্রায় ৪৫টিই হলো ঢাকা বিভাগে।

ঢাকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ

বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বমোট ৫৩টির অধিক পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি হচ্ছে ঢাকা শহরে (তন্মধ্যে ২টি ক্যাম্পাস অস্থায়ী)। এগুলো হলো :

  1. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ১৯২১)
  2. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ১৯৬২)
  3. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ১৯৯৮)
  4. শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০০১)
  5. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০০৫)
  6. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (স্থাপিত : ২০০৮)
  7. বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০১০)
  8. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় (অস্থায়ী ক্যাম্পাস) (স্থাপিত : ২০১৩)
  9. ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০১৪)
  10. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত :২০১৯)

বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বমোট ৭০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৪৫টিই হলো ঢাকা বিভাগে।

ঢাকার উল্লেখযোগ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ

  1. নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
  2. ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
  3. আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
  4. গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
  5. ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়
  6. অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ
  7. ইউনাইটেড ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
  8. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলোজি
  9. ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
  10. ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভারসিটি বাংলাদেশ
  11. স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
  12. প্রাইম ইউনিভার্সিটি
  13. ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ
  14. প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি
  15. ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগরিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি
  16. সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি
  17. নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
  18. উত্তরা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
  19. ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
  20. ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

0 Comments